আসসালামুআলাইকুম প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি সকলেই ভাল আছেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে কিংবা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন দেশ ও প্রদেশ ভ্রমণ করতে হয়। তবে সঠিক তথ্য ও যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে না জানার কারণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া জটিল মনে হয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করা খুবই সহজ। আপনি কি কাশ্মীর যেতে চাচ্ছেন? কাশ্মীরে কি কি রয়েছে জানতে চান ?শীতকালে কেন কাশ্মীর যাওয়া প্রয়োজন জানেন কি? আসুন বিস্তারিত জেনে নেই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
কাশ্মীরে কি কি আছে?
আসছে শীতকাল বেড়ানোর একটি উপযুক্ত সময়। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে এ সময় ঘুরতে যেতে দেশের বাইরে কাশ্মীরের সৌন্দর্যের লীলাভূমি পরিদর্শনে যেতে পারেন। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই কাশ্মীরের রূপে মুগ্ধ হবেন আপনিও যেমনটা হয়েছিলেন ভারতের মুঘল সম্রাট বাদশা জাহাঙ্গীর। তিনি কাশ্মীরকে স্বর্গের সাথে তুলনা করেছিলেন। সেন্ট্রাল, নর্থ এবং সাউথ কাশ্মীর সহ সম্পূর্ণ কাশ্মীর একটি আদর্শ ভ্রমণের জায়গা।
কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থান
কাশ্মীরের পুরো শহর তাই যেন স্বর্গরাজ্য, দিগন্ত জোড়া উঁচু উঁচু পাহাড় আর সাদা বরফের মেলা। এ রাজ্যেই দেখার মত অনেক জায়গা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের নাম হলো:
শ্রীনগর আবার শ্রীনগরে আছে মোঘল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন, হযরত বাল মসজিদ, ডাল লেক ও নাগিন লেক। গাড়ি ভাড়া করে সারাদিনের জন্য শ্রীনগর সরকার দেখলে দারুন আনন্দ পাবেন আর ডাল লেকের ভাসমান শহরটাও অনেক সুন্দর এবং ভালো লাগার মত শহর।
গুলমার্গ:
শ্রীনগর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে সবুজ ঘাসে বিস্তীর্ণ গুলমার্গ, যা সারা বছরই বরফে ঢেকে থাকে।
এখানে দেখতে পারবেন গন্ডোলা, গলফ কোর্স, বাবা ঋষির মাজার, আফার ওয়াত পিক, সেন্ট মেরি চার্চ, কেবল কার ছাড়াও প্যারাগ্লাইডিংয়ের উপভোগ করতে পারবেন গোলমার্গে।
পেহেলগাম:
শ্রীনগর থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে টেক্সি করে যেতে পারবেন পেহেল গামে। জুলাই থেকে অক্টোবর এর মাঝে গেলে এখানে দেখা মিলবে রাস্তার দু ধারের মনমুগ্ধকর আপেল বাগান। এছাড়াও আছে দেখার মত অনেক কিছু যেমন লিদার নদী, বেতাব ভেলি, চান্দের ওয়ারী, আরু ভ্যালি, ধাবিয়ান, কাশ্মীর ভেলি পয়েন্ট, কানিমার্গ, পেহেলগ্রাম ভিউ পয়েন্ট। এখানকার মিনি সুইজারল্যান্ড হিসেবে পরিচিত বাইসারানেও ঘুরতে পারেন আপনারা।
সোনামার্গ:
শ্রীনগর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুন্দর উপত্যকা ও ঝর্ণার দেখা মিলবে এই সোনামার্গে। এখানে রয়েছে থাজিয়ান হিমবাহ। এছাড়াও সিন্ধু নদী আছে স্লেজিং, স্নো বাইক ও ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ। তবে কাশ্মীরে কিছু জায়গা রয়েছে যা শহর থেকে একটু দূরে হয়তোবা অনেকেরই অজানা। কিন্তু জায়গা গুলি মনমুগ্ধকর এবং ভালোলাগার মতই উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মার্তণ্ড মন্দির। শ্রীনগর থেকে চৌষট্টি কিলোমিটার দূরে অন্যরকম স্থাপত্যে গড়ে ওঠা এক হিন্দু মন্দির যা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সম্মান করে থাকে। এখানে হায়দার ছবির একটা বিখ্যাত গানের শুটিং করা হয়েছিল। ছোট্ট একটি শহর কোকের নাগ যেখানে রয়েছে মাছ ধরার সুব্যবস্থা। চটপালে রয়েছে কাঠবাদাম ও আপেল বাগানের সমাহার। আরো যেতে পারেন নোবরা উপত্যকা ও দুধপতির মতো দেখার মত জায়গায়।
কিভাবে যাবেন কাশ্মীরে?
কাশ্মীরে যেতে পারেন উড়োপ্লেনে, ট্রেনে কিংবা বাসে। বিমানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি যেতে হবে, এরপরে সেখান থেকে শ্রীনগর। তারপর শ্রীনগর থেকে গাড়িতে করে পৌঁছে যাবেন কাশ্মীর। ট্রেনে যাবার ক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে হবে।
কলকাতা যাবার জন্য আছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ট্রেনে কলকাতা নামতে হবে তারপর ওখান থেকে ৩৫ থেকে ৩৬ ঘন্টা সফর করে জম্বু যেতে হবে। জম্বু যাওয়ার জন্য হিমগীরি ও জম্ব ু তাওয়াই নামের দুটি ট্রেন আছে। সপ্তাহে তিন দিন যথাক্রমে মঙ্গল শুক্র এবং শনিবার রাত ১১:৫০ এ কলকাতার হাওড়া থেকে জম্বর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় হিমগিরী ট্রেন।
প্রতিদিনই যাতায়াত করে থাকে এই সার্ভিসটি। সে ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না থাকলে হিমগিরিতে যাওয়াই ভালো। জম্বু থেকে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার সফর শেষে শ্রীনগর যেতে হবে। শ্রীনগর থেকে গাড়ি করে পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের শহর কাশ্মীরে।
বাসের ক্ষেত্রেও প্রথমে গ্রীন লাইন, সোহাগ বা শ্যামলী পরিবহনে কলকাতা থেকে জম্বু গিয়ে ওখান থেকে শ্রীনগরে পৌঁছে গাড়ি করে কাশ্মীরে যেতে হবে। ইচ্ছা হলে কলকাতা থেকে জম্বু অথবা শ্রীনগরে ডমেস্টিক বিমানেও যেতে পারবেন তবে সে ক
কখন যাবেন কাশ্মীর?
অপরূপে সাজানো কাশ্মীর যে কোন সময় ভ্রমণ পিপাসুদের ভালোলাগার মতো একটি দর্শনীয় জায়গা। তবে বিশেষ কিছু সময়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য আলাদাভাবে চোখের ধরা পড়ে।
বিশেষ করে শীতকাল হিসেবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ থাকে। আর তাই এই সময় কাশ্মীরে গেলে চারপাশের এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন। তবে শীতকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতার প্রয়োজন আছে।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য শ্রীনগর ও জম্বুতে বেশ কিছু হোটেল রিসোর্ট ও হাউস বোট রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল জামরুদ, হোটেল জাহাঙ্গীর, গ্র্যান্ড হোটেল উল্লেখযোগ্য। তবে ভালো টুরিস্ট এরিয়ায় যদি থাকতে চান তাহলে শ্রীনগরে ডাল লেকের পাশে রয়েছে বেশ কিছু হাউসবোট। যেমন প্রিন্স অফ ভ্যালে, ইয়ং মর্নিং স্টার, নিউজিল্যান্ড হাউস বোট।
তবে সেই ক্ষেত্রে খরচ অন্যান্য হোটেলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। আবার তেহেলগ্রামের কটেজে থাকলে যদি নিজেরা বাজার করে দেয়া হয় তাহলে খরচ তুলনামূলক কম হবে। তবে এই ক্ষেত্রে অনলাইনে বুকিং না দিয়ে কাশ্মীর গিয়ে আপনার যে শহর থাকতে ইচ্ছে হয় সেই হিসেবে হোটেল বুকিং দিলেই সবচেয়ে সুবিধা পাবেন।
কোথায় কি খাবেন?
কাশ্মীর গিয়ে নানা ধরনের তাজা ফলের স্বাদ নিতে পারবেন। কাশ্মীরের মাটন বিরিয়ানি বিখ্যাত। তাছাড়াও নানান ধরনের খাবার পেয়ে যাবেন কাশ্মীরি কাবাব, মাটন রোগান জোশ, ভেড়ার মাংস, পনির চামান, আলুর দম, টক, বেগুন, নারদ ইয়াখনি বিখ্যাত ইত্যাদি।
কাশ্মীর ভ্রমণ টিপস
ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এক থেকে দুই মাস আগেই বিমানের টিকিট কাটলে তুলনামূলক খরচ কম পড়বে।
শীতকালে কাশ্মীর যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শীতের প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।
কাশ্মীরে ট্রিপে একটু সময় নিয়ে যাওয়া ভালো সে ক্ষেত্রে ছয় দিনের সময় নিয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হবে।
কাশ্মীরের টুরিস্ট স্পট গুলোতে ভ্রমণের মজা বাড়ানোর নানা কথা বলেও প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কিছু চাটকদের লোকজন টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই বুদ্ধিমান হল সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা গিয়ে তারপর কাশ্মীর যাওয়া। এতে আপনার কলকাতাও দেখা হবে খরচ কম পড়বে। আমার সাথে ফেরার পথে চাইলে লাগাদ ঘুরে আসতে পারবেন।
আগেই অনলাইনে টাকা ও রুপির রেট জেনে টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিবেন।
যেকোনো জিনিস কেনার আগে দামাদামি করবেন কারণ কাশ্মীরে সবকিছুর দাম বাইরের পর্যটকদের কাছে একটু বেশি চাওয়া হয়। কাশ্মীরের খাবারে মসলা বেশি থাকে তাই একটু বুঝে শুনে খেতে হবে।
এখানে সাধারণত রাত আটটার পর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তাই আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সময় থাকতে কিনে রাখবেন।
কাশ্মীর ভ্রমণের আগে ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা সোনালী ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে
Reference: Info Vandar
উপসংহার
বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করা মনের পক্ষে এবং শরীরের পক্ষে ভালো। তাই বিনোদন প্রেমী বন্ধুদের জন্য আমরা আলোচনা করেছি কাশ্মীরের নজর কার া ভ্রমণের জায়গা ও কাশ্মীরে যাওয়ার যাবতীয় টিপস। আশা করছি আমাদের টিপস থেকে আপনি উপকৃত হবেন। পোস্ট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন কিংবা মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন ধন্যবাদ।