নতুন ব্লগে দ্রুত গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় | এডসেন্স অ্যাপ্রুভাল গাইডলাইন ২০২২

প্রিয় ভিজিটর বন্ধুরা, আশা করি সকলেই ভাল আছেন। একজন ব্লগার হিসেবে আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন আপনার ব্লগকে ইনকাম মুখী করতে চান। তবে গুগল এডসেন্স হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক যা আপনি আপনার ব্লগে মনিটাইজেশন এর জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। প্রত্যেক নতুন ব্লগার এডসেন্স দিয়েই কিন্তু তাদের ব্লগ মনিটাইজেশন করতে উদ্যোগী হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই গুগল এডসেন্সের নীতি বা পলিসি গুলোর সঠিকভাবে না মানার কারণে এডসেন্সে অ্যাপ্রুভাল পেতে ব্যর্থ হন। সেই সব ব্লগারদের জন্য আজকের পোস্টে আলোচনা করব গুগল এডসেন্স পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।

গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায়

আপনি যদি কিছু মৌলিক নিয়ম মেনে চলেন এবং আপনার সাইটে প্রফেশনাল ভাবে কাজ করেন, পাশাপাশি আজকের শেয়ার করা নিয়ম নীতিগুলো ফলো করেন তবে আপনার নতুন সাইটে গুগল এডসেন্স অনুমোদন পাবেন। গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিক রাখতে হবে নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:

গুগল এডসেন্স অনুমোদনের জন্য কতজন ট্রাফিক প্রয়োজন?

এডসেন্সে আবেদন করার জন্য প্রকৃত ট্রাফিকের ন্যূনতম কোন সীমা নেই । নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিজিটর থাকতে হবে এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই গুগল এডসেন্স অনুমোদনের জন্য । অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক গুলির মতো google এর ন্যূনতম ট্রাফিক টার্গেট নেই যা আপনাকে পূরণ করতে হবে।

যদিও গুগল বলছে ট্রাফিকের সংখ্যা গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদন ফ্যাক্টর নয় তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত অনুযায়ী আমি মনে করি এডসেন্সে এপ্লাই করার আগে কিছু ট্রাফিক থাকা প্রয়োজন। এতে ব্লগে গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রুভ পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

আপনার ব্লগে যদি ভাল পরিমান ট্রাফিক না থাকে তবে আপনি আপনার ব্লগ থেকে বেশি ইনকাম করতে পারবেন না। যেহেতু ট্রাফিকের ভিজিট এর উপর ভিত্তি করে ই আপনার ইনকামটা নির্ধারিত হবে। কেননা এডসেন্স থেকে ইনকাম করার জন্য আপনার প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক থাকতে হয়। অন্যথায় এডসেন্স থেকে টাকা আয় করা একদম অসম্ভব।

সুতরাং যদি আপনি একজন বিগেইনার ব্লগার হন তবে আমি আপনাকে আপনার ব্লগে টার্গেটকৃত ট্রাফিক পেতে পিনটেরেস্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিব কারণ এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গুগল থেকে বিনামূল্যে অর্গানিক ট্রাফিক পেতে এসইও এর উপর প্রচুর পরিমাণে কাজ করতে বলবো। যখন আপনার ওয়েবসাইটের রেংক করবে তখন এমনিতেই আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বেড়ে যাবে।

গুগল এডসেন্স আবেদন করার আগে আপনাকে যা করতে হবে

১) উচ্চমানের এবং পর্যাপ্ত কনটেন্ট লিখুন

আপনার ব্লগ অন্য কোন ওয়েবসাইট বা ব্লক থেকে কোনরকম আর্টিকেল চুরি করা বা কপি পেস্ট করে পাবলিশ করা যাবে না । আপনার টার্গেটকৃত ট্রাফিকের জন্য সব সময় চেষ্টা করবেন ভালো মানের তথ্যমূলক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মূল্যবান কন্টেন্ট লেখার।

সেই পোস্টগুলো হতে হবে অবশ্যই 800 থেকে 900 শব্দের বেশি। গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কনটেন্ট। তাই এডসেন্সে আবেদন করার আগে আপনার ব্লগে অবশ্যই ২৫ থেকে ত্রিশটি কন্টেন্ট রাখতে হবে। এবং প্রতিটি পোস্টে একবার তার বেশি ছবি ব্যবহার করতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে ছবিগুলো যেন ইউনিক হয় । অনেকে দেখা যায় গুগল এবং ফেসবুক থেকে ছবি ডাউনলোড করে তাদের ব্লগে আপলোড করে দেয় এই কাজটা করবেন না। আপনার ব্লগে যে ছবিগুলো আপলোড করবেন সেগুলো অবশ্যই আপনার নিজের হাতের তৈরি হতে হবে। এবং অবশ্যই কপিরাইট মুক্ত ছবি হতে হবে।

সুতরাং গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনার ব্লগে কিছু পরিমাণ ভালো মানের কন্টেন্ট রয়েছে। তবে সহজে গুগল এডসেন্স অ্যপ্রুভাল পাবেন।

২) আপনার পোস্টগুলোতে ভালোভাবে seo করুন

মেটা ডেসক্রিপশন, মেয়েটা ট্র্যাকগুলো দিয়ে আপনার ব্লগে পোস্টগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করে নিন।

গুগল এডসেন্স ক্রুলার বোর্ড ব্যবহার করে আপনার সম্পূর্ণ সাইট চেক করতে পারেন, কারণ এডসেন্স টিমের পক্ষে শতশত ওয়েবসাইট ভিজিট করা এবং পর্যালোচনা করা সম্ভব নয় যারা তাদের ওয়েবসাইটে এডসেন্স অনুমোদনের জন্য আবেদন করছে। তাই আপনার কনটেন্টগুলোতে যদি ভালো মতো এসইও করেন তাহলে গুগল এডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি পজেটিভ দিক হিসেবে কাজ করবে।

আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করেন, তাহলে সহজেই সার্চ ইঞ্জিনের জন্য আপনার ব্লগের বিষয়বস্তু সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ বা এসইউ করার জন্য বিনামূল্যে ইয়োস্ট এসইও প্লাগিন ইনস্টল করতে পারেন।

৩) আবশ্যিক পেজগুলো তৈরি করুন

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ রয়েছে যা আপনার ব্লগে এডসেন্স অ্যাপ পাওয়ার জন্য অবশ্যই থাকতে হবে। পেজগুলো হল:

About us
Contact us
Privacy Policy
Terms and condition

About: এই পেজে আপনার ওয়েবসাইট এবং ওয়েবসাইট এর লেখকদের সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে। যাতে ওই লেখাটি পড়ে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইট কি ধরনের, এখানে কি কি কনটেন্ট প্রকাশ করা হয় এবং এটি কারা পরিচালনা করে সেই বিষয়ে খুব সহজেই পরিষ্কার ধারণা পেতে পারে।

Contact Us: এখানে আপনার সাথে পাঠকদের বা ভিজিটরদের যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম দিয়ে দিতে হবে। সেটি হতে পারে কন্টাক্ট ফর্ম ,ইমেইল এড্রেস, ফোন নাম্বার, ফেসবুক পেইজ এর লিংক ইত্যাদি।

Privacy Policy: এই পেজে আপনাকে কিছু বিষয়ে ইউজারকে ক্লিয়ার করতে হবে। অর্থাৎ আপনি ইউজারের ডাটা কিভাবে কালেক্ট করছেন কেন কালেক্ট করছেন সেই ডাটা গুলো কিভাবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে লিখে দিতে হবে।

৪) আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ হতে হবে

গুগল তাদের এডসেন্সের নিয়ম ও শর্তাবলী স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে তারা শুধুমাত্র 18 বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীদের আবেদন গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে আবেদন করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার বয়স ১৮ বা তার বেশি হয়েছে কিনা। অন্যথায় আপনার এডসেন্স এপ্রুভ করা হবে না।

যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয়, আপনি আপনার বাবা-মা বা অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করতে পারেন এবং তাদের তথ্য ব্যবহার করে এডসেন্সের জন্য সাইন আপ করতে পারেন।

৫) কপিরাইট মুক্ত ছবি ব্যবহার করুন

আগেই বলেছি আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিটা পোস্ট অবশ্যই ইউনিক থাকতে হবে কোথাও থেকে কপি করা যাবে না। সেই সাথে ওই পোস্টগুলোতে ব্যবহার করা ছবিগুলো অবশ্যই কপিরাইট মুক্ত হতে হবে।

আপনি যদি google ফেসবুক অথবা অন্য কারো ওয়েবসাইট থেকে ছবি ডাউনলোড করে আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিস্ট করেন সে ক্ষেত্রে কিন্তু গুগোল অ্যাডসেন্স অনুমতি পাবেন না। আপনার ব্যবহার করা ছবিগুলো অবশ্যই কপিরাইট মুক্ত হতে হবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন কপিরাইট মুক্ত ছবি কোথায় পাবো। চিন্তার কোন কারণ নেই ওয়েবসাইটগুলো থেকে আপনার কপিরাইট মুক্ত ইমেজ ডাউনলোড করতে পারবেন ফ্রিতে।

কপিরাইট মুক্ত ছবি ডাউনলোডের অনেক ওয়েবসাইটের মধ্যে থেকে বাছাই করা সেরা দশটি সাইটের নাম প্রকাশ করলাম।

১. ক্রিয়েটিভ কমন্স
২. স্টলভল্ট
৩. এভরি স্টক ফটো
৪. ফ্লিকার
৫. এস এক্স ইউ
৬. মাইক্রোসফট
৭. উইকিমিডিয়া
৮. ইমেজ আফটার
৯. get the image

৬) ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং প্রফেশনালি সুন্দরভাবে ওয়েবসাইট ডিজাইন করুন

ভিজিটরদের আপনার ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠাগুলি সহজে খুঁজে পেতে একটি পরিষ্কার নেভিগেশন সহ একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি সাইট ডিজাইন করা উচিত।

আপনি যদি ব্লগার অথবা ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি সহজে একটি ভালো মানের থিম ব্যবহার করে প্রফেশনাল ভাবে আপনার ব্লগ সাইট ডিজাইন করতে পারেন।

৭) গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন

উপরে উল্লেখিত সমস্ত টিপস অনুসরণ করে সেগুলো আপনার ব্লগে সঠিকভাবে এপ্লাই করে আপনি গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সব নিয়ম গুলো সঠিক এবং সুনিপুণভাবে কাজে লাগান তবে দ্রুত আপনার নতুন ব্লগের জন্য এডসেন্স অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

গুগল এডসেন্সে আবেদন করার জন্য, গুগল এডসেন্সের জন্য সাইন আপ পৃষ্ঠায় যান এবং আপনার ওয়েবসাইটের বিবরণ যোগাযোগের তথ্য ইত্যাদি প্রবেশ করে আবেদন করুন।

গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন যে আপনি আপনার আসল নাম, আসল ঠিকানা এবং একটি সঠিক প্রদানকারীর নাম ব্যবহার করছেন।

গুগল এডসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়া

একবার আপনি গুগল এডসেন্সের জন্য সাইনআপ করলে, আপনাকে আপনার ব্লগে এডসেন্স কোড যুক্ত করতে হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়ার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞাপন ফাঁকা হিসেবে দেখানো হবে। চূড়ান্ত পর্যালোচনা এবং অনুমোদনের জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে।

যদি আপনার ব্লগে গুগল এডসেন্স অনুমোদন দিয়ে দেয় তাহলে আপনি একটি নিশ্চিতকরণ ইমেইল পাবেন অনেকটা এরকম “yousitename.com” এখন এডসেন্স বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য প্রস্তুত।

হ্যাঁ এখন আপনি আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন যোগ করতে পারবেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখতে শুরু করবেন এবং আপনার এডসেন্স অনুমোদিত ব্লক বা ওয়েবসাইট থেকে আয় করা শুরু হবে।

আপনার ইনকাম $ 10 ডলারে পৌঁছে গেলে, এডসেন্স আপনার দেওয়া ঠিকানায় একটি ঠিকানা যাচাই করুন পিন বা এডসেন্স ভেরিফিকেশন পিন পাঠাবে। যখন তিনটি আপনি হাতে পাবেন তখন আপনার একাউন্ট লগইন করি এই পিনটি দিয়ে এডসেন্স একাউন্ট ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে।

উপরের প্রতিটা টিপস যদি আপনি সঠিকভাবে ফলো করেন তাহলে মনে করুন আপনি গুগল এডসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়ার সমস্ত ধাপ সম্পন্ন করেছেন। এরপর যখন আপনার ইনকাম ১০০ ডলার হবে তখন এগুলো আপনি আপনার ব্যাংকের ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন।

উপসংহার

আপনি যদি উপরের উল্লেখিত নিয়মগুলি অনুসরণ করতে পারেন তবে আপনি অবশ্যই খুব অল্প সময়ের মধ্যে google এডসেন্স অনুমোদন পাবেন। গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি আমরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *