প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি সকলে ভাল আছেন। আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করে থাকি। অনেক প্রকার খাদ্যের পাশাপাশি ব্যতিক্রম কিছু খাদ্য খুঁজে থাকি যা আমাদের শরীরের উত্তম ফিরিয়ে আনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আপনি জানেন কি এরকম খাদ্যের তালিকায় লাল চা কতটা উপকারী? লালচা শরীরের অনেক বড় উপকার করে আমাদের অজান্তেই। যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি সে তত বেশি সুস্থতার সাথে জীবন যাপন করে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। আসুন তাহলে জেনে নেই লাল চায়ের উপকারিতা কি কি? এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তবে এই পোস্ট আপনার জন্য অনেকটা সহযোগী হবে। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
লাল চা খেলে কি হয়?
লাল চা শরীরের অনেক বড় উপকার করে আমাদের অজান্তেই। আপনি জানলে অবাক হবেন লাল চা খেলে কত বেশি উপকৃত হবেন আপনি। লাল চায়ের মধ্যে থাকি ক্যাফেইন, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, মিনারেল, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ ও পলিফেনাল। লাল চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর জন্য অনেক ভালো একটি উৎস। ট্যানিন ,গুয়ানিন, এক্সাথিন, পিউরিন ইত্যাদিকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলা হয়।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে যখন সারা বিশ্ব টালমাটাল অবস্থা ঝুঁকির মুখে ঠিক তখনও পৃথিবীতে সুষ্ঠু মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এতগুলো মানুষের সুস্থতার পিছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিজ নিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপক থাকার কারণ।
হার্টে যে উপকার করে লাল চা
নিয়মিত লাল চা খেলে কার্ডিওভাসকুলার এর সমস্যা দূর হয়। চায়ের মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরলের ক্ষতিকৃত অংশ জারিত হওয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত লাল চা শরীরের বিশেষ করে হৃদপিণ্ডকে সচল রাখতে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে লাল চা
চায়ের মধ্যে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট রেক্টাল , জরায়ু ক্যান্সার, ফুসফুস ও ব্লাড ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার ও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এসব মারাত্মক রোগ থেকে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে লাল চা।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
লাল চা মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখে। চায়ের মধ্যে থাকার ট্যানিন ফ্লু , ঠান্ডা ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণ থেকে শরীরকে দেয় নিশ্চিত সুরক্ষা। শীতের সময় লাল চা আপনাকে সর্দি-কাশির মতো বিরক্তি কর রোগ থেকে সুস্থতা দান করে। খুশখুস কাশ থেকে শুরু করে ফুসফুসে আক্রান্ত জীবাণুদেরকে মেরে ফেলতে সহায়তা করে।
প্রতিদিন তিন চার কাপ লাল চা পান করলে শরীরের প্রদাহ কমে।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে লাল চা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব শরীরের অন্যতম অঙ্গ মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। চায়ে থাকা এই উপাদানটি দাঁতের ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। মুখে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করে চায়ে থাকা ফ্লোরাইড।
মস্তিষ্ক ও স্নায়ু ভালো রাখতে লাল চা
লাল চা রক্তের পরিবহনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্ককে শিথিল করার অন্যতম প্রাকৃতিক ঔষধ বলা হয় লাল চা কে। লাল চা কে গরিবের ডাক্তার বলা হয়। আপনার মস্তিষ্ক যখন দুশ্চিন্তায় মগ্ন থাকে তখন লালচা আপনাকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রতিদিন তিন থেকে চার কাপ লাল চা খেলে মানসিক চাপ তুলনামূলক কমে যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে লাল চা এর ভূমিকা
লাল চা এর মধ্যে থাকা ট্যানিন মানব দেহের পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে দেয়। গ্যাস্ট্রিক এর মত ভয়ানক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে এই হালকা গরম পানীয়।
লাল চা খাওয়ার জন্য যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয়
সামান্য চা পাতায় এত এত উপকার তাই বলে শুধু একের পর এক খেলেই সুফলগুলো পেয়ে যাবেন বিষয়টা তা নয়। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তবে সব কিছুর মত এখানেও কিছু বিষয়ে বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে উপকার কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো:
চা পাতার মান ঠিক আছে কিনা তা দেখে কিনতে হবে। কেননা সব চা-পাতা যে অরিজিনাল বিষয়টা তা নয় বাজারে শত শত ভেজাল পণ্যের ভিড়ে প্রকৃত চা পাতা খুঁজে বের করুন। সম্ভব হলে কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করুন।
আপনার ভালোর জন্যই আপনাকে ভালো মানের চা এর পাতা ক্রয় করতে হবে।
চা বানানোর নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে পানি ফোটাতে হবে। এরপরে চুলা বন্ধ করে পানির মাঝে চা পাতা দিয়ে দুই থেকে পাঁচ মিনিট রেখে দিতে হবে। পরবর্তীতে কাপে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে খেতে হবে।
লাল চা এর স্বাদ বাড়ানোর জন্য চায়ে আদা, লবঙ্গ, লেবু, এলাচ, দারুচিনি ,তেজপাতা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে চায়ের স্বাদ কয়েক গুণ বেড়ে যায় এবং আলাদাভাবে তুলনামূলক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে পাঁচ কাপ চা খাওয়া যেতে পারে চায় চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক খাওয়াই উত্তম। তবে যদি আপনি উপকার পাওয়ার জন্য চা খেয়ে থাকেন তবে চিনি কম অথবা না খাওয়াই অনেক ভালো লবণ দিয়ে খেতে অভ্যাস করুন।
লাল চা এর পাশাপাশি আর কি খাওয়া যেতে পারে?
লাল চা এর পাশাপাশি গ্রীন চা বা সবুজ চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনুরোধ করব আপনি যদি পারেন তবে মর্ডান হারবাল গ্রুপের গ্রিন টি নামে একটি চায়ের পণ্য রয়েছে যথেষ্ট ভালো মানের সেই চা সংগ্রহ করে খেতে পারেন। বলে রাখা ভালো স্বাদের জন্য নয় এটি উপকারের জন্যই খেতে পারেন। বর্তমান সময়ে সকল খাদ্যদ্রব্যে এত পরিমানের ভেজাল যে সুস্থ থাকার জন্য এক প্রকার প্রতিযোগিতা চলছে।
উপসংহার
লাল চা মানুষের জীবনে কতটা উপকারী তা চিকিৎসক দের নিকট জানা যায়। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করতে হয় আমাদের। তাই কি খেলে সুস্থ থাকা যায় এ নিয়ে ব্যাপক চিন্তা করে থাকি সবাই। অল্প অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ লাল চায়ের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায় তা জেনে আপনি অবশ্যই নিয়মিত লাল চা পান করবেন। আমাদের পোস্ট থেকে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে লেখাটি শেয়ার করবেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।